ইতিহাস ও ঐতিহ্য
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলীর প্রাণকেন্দ্র ফইল্ল্যাতলী বাজার সংলগ্ন এলাকায় ১৯৪২ সালে স্বর্গীয় জমিদার বাবু প্রাণহরি দাশ প্রতিষ্ঠা করেন “প্রাণহরি একাডেমী”। এটি ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। এতদ্ অঞ্চলে একটি মাত্রই সুপ্রাচীন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল যাহা দক্ষিণ কাট্টলী, উত্তর কাট্টলী, উত্তর হালিশহর, রামপুর এবং সরাইপাড়া এলাকার আপামর ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাবু প্রাণহরি দাশের শিক্ষানুরাগী পুত্র বাবু যোগেন্দ্র লাল দাশের ত্যাগ ও অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৬০ সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত বিদ্যালয়টি পুন:নির্মাণ, নিজের বাড়ীতে অস্থায়ী বিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষার্থীদের আপদকালীন পাঠদানের ব্যবস্থাকরণ, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দপ্তর ও অর্থশালী শিক্ষানুরাগীদের সাথে যোগাযোগ ও তদবির করে বিদ্যালয় পুন: নির্মানের তহবিল গঠন ও তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থের যোগান দিয়ে বিদ্যালয়টি পুন:প্রতিষ্ঠা করেন ডা: মো: ফজলুল আমীন। নতুন করে বিদ্যালয় ভবন প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পর শুরু হয় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। স্বাধীনতা বিরোধী এদেশীয় রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনী বিদ্যালয়ে আগুন দিলে প্রয়োজনীয় সকল রেকর্ডপত্র আগুনে পুড়ে যায়। অত:পর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় ভবনটি পুন: সংস্কার করা হয়। ডা: মো: ফজলুল আমীনের নি:স্বার্থ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ও অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার প্রয়াসে ১৯৬৫ সালে সর্বসম্মতিক্রমে বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় “পি. এইচ. আমীন. একাডেমী”। জমিদার বাবু প্রাণহরি দাশের প্রতিষ্ঠা ও ডা: ফজলুল আমীনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগে পুন: প্রতিষ্ঠা পাওয়া বিদ্যালয়টি সংক্ষিপ্ত নাম না রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বর্তমান নাম “প্রাণহরি আমীন একাডেমী”।
প্রাকৃতিক শোভা মন্ডিত মনোরম পরিবেশ, সুবিশাল সবুজ মাঠ, মাঠের চারপাশে ফলজ ও বনজ গাছের সবুজ বেষ্টনী ও ওয়াকওয়ে, পরিকল্পিত ফুলের বাগানে ফুলের সুগন্ধিত আবহে সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যেন এটি এক প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ। অসাধারণ ও অনুপম রূপবৈচিত্রপূর্ণ এই স্কুল ক্যাম্পাস পরিদর্শনে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।
এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যালয়ের সমমানের পরিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে মানসন্মত ফুটবল ও বাস্কেটবল মাঠ। এই বিদ্যালয়ে রয়েছে ছাত্র-শিক্ষকের যথাযত অনুপাত, আইসিটি’র সর্বোচ্চ ব্যবহার, শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ও উপযুক্ত পাঠক্রম। এখানে সর্বাত্মক চরিত্র গঠনের শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি, খেলাধুলা, শারীরিক ও মানসিক রুচি বিকাশের আনুষঙ্গিক কার্যকলাপের উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে। নেতৃত্বের গুণ, দলগত মনোভাব, অংশগ্রহনের ক্ষমতা, বাস্তব জীবনের মোকাবেলার সাধারণ পারদর্শিতা এবং সক্ষমতা বিকাশ ইত্যাদি সুচারুরূপে পরিচালনের জন্য বিদ্যালয়ে রয়েছে সঠিক ও যুগোপযোগী কার্যক্রম। “প্রাণহরি আমীন একাডেমী” আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতভাগ রূপে সৌন্দর্য্যের পুরো ডালিটা সাজিয়ে রেখেছে এতদ্ অঞ্চলের জ্ঞানপীপাসু শিক্ষার্থীদের জন্য। সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদর্শ বিদ্যালয়ের উপযুক্ত গতিশীলতা ধরে রাখতে অবিরত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে চলেছেন অত্র বিদ্যালয়ের নিয়মিত পরিচালনা পরিষদ। এতে করে সু-শৃংখল শিক্ষার পরিবেশ ও মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এই বিদ্যালয়ের উপযুক্ত গতিশীলতায় উপকৃত হচ্ছে আশেপাশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বইয়ের মতো অতুলনীয় বন্ধুর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ে রয়েছে প্রায় চার হাজার বই সম্বলিত একটি সুবিশাল গ্রন্থাগার। জ্ঞানের তকমায় পূর্ণতা লাভে লাইব্রেরীর গুরুত্ব অনুধাবন করে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে নিয়মিত জ্ঞান চর্চা করে থাকেন। নানান উৎস হতে নতুন নতুন বই সংযোজনে পরিচালনা কমিটি সদা তৎপর রয়েছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশকে টেকসই করতে তথা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিজ্ঞান সম্পর্কিত শিক্ষাদান, গবেষণা ও জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে। ইন্টারনেট অব থিংস, মেশিন লার্নিং, রোবটিক্স, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পারদর্শী করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তথা ডিজিটাল বিপ্লবের ফলাফলকে অনুকূলে আনতে মৌলিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার প্রয়াস চলমান রয়েছে।
একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাপ্ত মৌলিক জ্ঞান সম্প্রসারন ও সুসংহত করে মৌলিক বিষয়ক অধিকতর জ্ঞানদান করে অর্ন্তনিহিত মেধা ও সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশে সাহায্য করা এবং উচ্চ শিক্ষায় দক্ষতার সহিত অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা। সেই প্রয়োজনে বিদ্যালয়ে রয়েছে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে একদল মেধাবী, দক্ষ ও পরিশ্রমী শিক্ষক মন্ডলী। চিন্তা-চেতনায় ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃংখলা ও সচেতন যাপনের মানসিকতার তাগিদে প্রত্যেক সম্মানীত শিক্ষকগণ কর্মক্ষেত্রে আত্মসচেতন, কর্তব্যপরায়ন ও কর্মতৎপর।
এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু যোগেন্দ্র লাল দাশ এম.এ, বি.এল এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব এ.কে.এম. নেওয়াজ বি.এ, বি.এড। তিনি অত্র বিদ্যালয়ের ১৬ তম প্রধান শিক্ষক। অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সঠিক পথে রেখে তাঁর সুনিপুণ ও দক্ষ পরিচালনায় বিদ্যালয়টি সু-শৃংখল ও মানসম্মত-বিজ্ঞান মনস্ক দক্ষ জাতি গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে।